শীতে বারবার চা-কফি পান: উষ্ণতার ছলে লুকিয়ে থাকা বড় বিপদ!

শীতে বারবার চা-কফি পান: উষ্ণতার ছলে লুকিয়ে থাকা বড় বিপদ!--শীতের সকালে এক কাপ গরম চা বা কফি হাতে নিয়ে জানালার ধারে বসে থাকা—এ যেন একটা রোমান্টিক সিনেমার দৃশ্য! কিন্তু বাস্তবে এই ‘উষ্ণতার আলিঙ্গন’ যদি বারবার হয়ে ওঠে, তাহলে আপনার হাঁটু বা জয়েন্টগুলো হয়তো ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার প্ল্যান করছে। হ্যাঁ, শুনতে অদ্ভুত লাগলেও, চিকিৎসকরা বলছেন যে শীতে অতিরিক্ত চা-কফি পানের অপকারিতা কেবল ক্যাফেইনের উত্তেজনা নয়, বরং এটি আপনার শরীরের জয়েন্টগুলোকে শুকিয়ে তুলে ব্যথার ফাঁদে ফেলতে পারে। আজকের এই লেখায় আমরা একটু হাস্যরস মিশিয়ে জেনে নেব, কেন এই গরম পানীয়গুলো শীতে ‘ভিলেন’ হয়ে ওঠে এবং কীভাবে এর থেকে বাঁচা যায়। চলুন, শুরু করি!

শীতের ঠান্ডায় চা-কফির ‘ডাবল এট্যাক’: কী হচ্ছে আসলে শরীরে?

কল্পনা করুন, শীতের সকালে আপনি চা-কফির কাপ নিয়ে বসেছেন, কিন্তু আপনার হাঁটু বলছে, “ভাই, এবার থামো না!” কেন? কারণ শীতে আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবেই উষ্ণতা খুঁজে, কিন্তু এই পানীয়গুলোর ক্যাফেইন একটা ছদ্মবেশী ‘ডিহাইড্রেটর’। ভারতের রায়পুরের অর্থোপেডিক বিশেষজ্ঞ ডা. দুষ্মন্ত চৌহানের কথায়, চা-কফি গরম হলেও এগুলো আপনার হাড় এবং জয়েন্টগুলোকে শুষ্ক করে তোলে। বিশেষ করে হাঁটুর কার্টিলেজ—যেটা দুই হাড়ের মাঝে ‘কুশন’ হিসেবে কাজ করে—এর বেশিরভাগ অংশ পানি দিয়ে তৈরি। পানি কমলে এর স্থিতিস্থাপকতা হারায়, আর হাঁটুতে ধাক্কা শোষণ করার ক্ষমতা কমে যায়। ফলে? ব্যথা আর শক্তভাব!

শীতে তৃষ্ণা কম অনুভূত হয় বলে আমরা পানি কম খাই, কিন্তু চা-কফির কাপ বাড়িয়ে দিই। কিন্তু এই পানীয়গুলো কখনোই পানির বিকল্প নয়। উল্টে, ক্যাফেইনের কারণে প্রস্রাব বাড়ে, শরীর থেকে তরল বেরিয়ে যায়। শীতের ঠান্ডায় রক্তনালিগুলো সংকুচিত হয়ে রক্তসঞ্চালন ধীর করে, জয়েন্টে অক্সিজেন আর পুষ্টি পৌঁছাতে দেরি হয়। এর উপর চা-কফির ‘ডাইইউরেটিক’ প্রভাব যোগ হলে শরীর একেবারে ‘ড্রাই ক্লিনিং’ হয়ে যায়! হাস্যকরভাবে বললে, আপনার হাঁটু যেন একটা পুরনো গাড়ির ইঞ্জিন—লুব্রিকেন্ট (পানি) কমলে ঘর্ষণ বাড়ে, আর ব্যথা শুরু হয়।

অতিরিক্ত চা-কফির অপকারিতা: কেবল ব্যথা নয়, দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি

অর্থোপেডিক সার্জন ডা. পি সি জগদীশের মতে, ক্যাফেইন সরাসরি কার্টিলেজ নষ্ট করে না, কিন্তু এটি শরীরকে ডিহাইড্রেট করে জয়েন্টের সমস্যা বাড়ায়। কার্টিলেজ শুকিয়ে গেলে হাড়ের সঙ্গে হাড়ের ঘর্ষণ বাড়ে, হাঁটু শক্ত হয়, আর সকালে উঠে দাঁড়ালে ‘ক্র্যাক’ শব্দ করে। এটাই শীতে বারবার চা-কফি পানে হতে পারে বড় বিপদ—যেমন আর্থ্রাইটিস বা দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা। আর শীতে আমরা কম নড়াচড়া করি, ঘরে বসে থাকি—এটাও সমস্যা বাড়ায়। যেন শীতের ঠান্ডা আর চা-কফির ক্যাফেইন মিলে একটা ‘টিম ওয়ার্ক’ করে আপনার জয়েন্টগুলোকে টার্গেট করে!

কল্পনা করুন, আপনি অফিসে বসে পঞ্চম কাপ চা নিচ্ছেন, আর আপনার হাঁটু চুপচাপ বলছে, “এবার পানি দাও, না হলে আমি ধর্মঘট করব!” হ্যাঁ, এই অজান্তে তৈরি হওয়া পানিশূন্যতাই মূল ভিলেন।

প্রতিকারের সহজ উপায়: চা-কফি ছাড়াই উষ্ণ থাকুন!

ভালো খবর হলো, শীতে চা-কফি পুরোপুরি বাদ দিতে হবে না—কেবল পরিমিত রাখুন। দিনে তিন-চার কাপের বেশি খেলে অন্তত ২-২.৫ লিটার পানি পান করুন। এতে জয়েন্টের লুব্রিকেশন ঠিক থাকবে। আরও কিছু টিপস:

  • নড়াচড়া বাড়ান: শীতে ঘরে বসে না থেকে হালকা স্ট্রেচিং, হাঁটা বা সাইক্লিং করুন। এতে টিস্যু শক্ত হবে না, ব্যথা কমবে। যেন আপনার হাঁটুকে বলুন, “চলো, একটু ওয়ার্কআউট করি!”
  • পুষ্টির যত্ন নিন: ভিটামিন ডি (সূর্যের আলো বা খাবার থেকে), ক্যালসিয়াম এবং ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ খাবার খান। এগুলো কার্টিলেজকে পুষ্ট করে প্রদাহ কমায়।
  • অলটারনেটিভ চয়েস: হার্বাল টি বা গরম লেবুর পানি চেষ্টা করুন—এগুলো ক্যাফেইন ছাড়া উষ্ণতা দেয়।

মনে রাখবেন, শরীর সচল রাখলে এবং পানি পান নিয়মিত করলে শীতের এই বিপদ থেকে সহজেই বাঁচা যায়।

শেষ কথা: শীতে চা-কফির উষ্ণতা উপভোগ করুন, কিন্তু অতিরিক্ত হলে সেটা আপনার জয়েন্টের জন্য ‘কোল্ড ওয়ার’ হয়ে উঠতে পারে! যদি ব্যথা বাড়ে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এই শীতে সুস্থ থাকুন, উষ্ণ থাকুন—কিন্তু স্মার্টভাবে। আপনার অভিজ্ঞতা কী? কমেন্টে শেয়ার করুন!

Leave a Comment